এম আর রিয়াদঃ করোনার এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সন্তানের কথা চিন্তা করে ভেঙ্গে পড়ছেন অভিভাকরা। আর ভেঙ্গে পড়াটাই স্বাভাবিক। বিশ্ব যেখানে আতঙ্কে প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা কাটাচ্ছে। এমন সময়ে সন্তানের কি অবস্থা, তা জানারও কোন উপায় নেই। সকল বাবা-মা সন্তানের দেখভাল করতে সর্বদাই মরিয়া হয়ে থাকেন। কি করে? কি খায়? এমন প্রশ্ন অন্তরজোড়া। পিতা-মাতার মতো যত্নবান না হলেও শিশুর প্রতি কতটা যত্নশীল হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ কিংবা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো? শিশু আইনানুযায়ী; শিশুর প্রতি কেমন ব্যবহার করা হচ্ছে? এমন প্রশ্ন সকল অভিভাবকদের। বিশ্ব জুড়ে করোনা মহামারিতে মৃত্যুর মিছিল চলছে প্রতিনিয়ত। এমন মারাত্মক পরিস্থিতিতে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে বিশ্বের সব বন্দি শিশুকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউনিসেফের নির্বাহি পরিচালক হেনরিটা ফোর তার বিবৃতিতে বলেছেন, এই ভয়াবহ সংক্রমণের সময়েও লাখ লাখ শিশু বন্দি অবস্থায় রয়েছে। কেউ রয়েছে কারাগারে। কেউ আবার অভিবাসন প্রক্রিয়ায় আটক।
হেনরিটা ফোর বলেন, বন্দি শিশুদের একটা বড় অংশ রয়েছে গাদাগাদি করে। যা করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আবার এসব শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে বলে জানান তিনি।
ইউনিসেফ বলছে, আটককৃত শিশুরা অবহেলা নির্যাতনের শিকার। করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর এসব শিশু থেকেই করোনা মারাত্বক ভাবে ছড়াতে পারে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক তার বিবৃতিতে বলেন, সরকার সমস্ত শিশু যেন নিরাপদে তাদের পরিবার বা আশ্রয়দাতার কাছে ফিরে আসতে পারে; সেজন্য তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই। শিশু আইন-২০১৩ তে জাতীয় শিশু নীতি,২০১১’র ৬.২ এ শিশুর দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে শিশুর পুষ্টি, স্বাস্থ্য, সার্বিক সুরক্ষা, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে মর্মে বলা হয়েছে। ৬.৩’র ৬.৩.১ থেকে ৬.৩.৭ পর্যন্ত শিশুর পুষ্টির জন্য বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানিসহ বিভিন্ন শিশু সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে অভিভাকরা বলছেন, শিশুর নিকটাত্মীয় অসুস্থ হলে কিংবা মারা গেলে, না দেখতে পারার আঘাতে মানুষিকভাবে কতটা বিপর্যস্ত হতে পারে, এমন বিষয় নিয়েও চিন্তিত তারা।
করোনা মহামারিতে নানাবিধ নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হচ্ছে সকলের। সামাজিক দুরত্বতা বজায় রাখা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন সরকার। কিন্তু জেলখানা কিংবা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে কতটা সামাজিক নিরাপত্তা রয়েছে, তা কারোরই বোধগম্য নয়! কারাগার ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থানরত শিশুদের অভিভাবকরা বলছেন, এমন মহামারিতে সরকার যতটা সামাজিক দুরত্বতা বজায় রাখতে বলেছে, তা ওদের সম্ভব হয়ে ওঠেনা। বরং পুষ্টিহীনতায় ভূগছে শিশুরা। তাই সরকার তথা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এসকল শিশু অভিভাবকদের বিনীত অনুরোধ যাতে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে শিশুদের জামিন বা মুক্তি দিয়ে দেয়। শিশু আইনে দেখা গেছে শিশু আদালত এবং উহার কার্যপ্রণালীর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩৫ নম্বরে (১) এ শিশু আদালতের প্রত্যেক আদেশে ইহা নির্দিষ্ট বিরতিতে পর্যালোচনা করিবার বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যাহার মাধ্যমে শিশু আদালত ইহার প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনা করিতে পারিবে এবং শিশুকে শর্ত সাপেক্ষে বা বিনা শর্তে মুক্তি প্রদান করিতে পারিবে। (২) এ বলা হয়েছে, সরকার যেকোন সময় ধারা ৩৪ এর উপ-ধারা (২) এর বিধান অনুসারে প্রাপ্ত সুপারিশ বিবেচনা করিয়া, আটকাদেশপ্রাপ্ত শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান হইতে বিনা শর্তে বা তদকর্তৃক নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি প্রদানের জন্য আদেশ প্রদান করিতে অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের জন্য বিষয়টি শিশুকল্যাণ বোর্ডের নিকট প্রেরণ করিতে পারিবে। পঞ্চম অধ্যায়ের ২৯ নম্বরের (১) ও (২) এ জামিনের ব্যাপারে ৩০ নম্বরে শিশু আদালত কর্তৃক জামিন বা মুক্তির আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। সেখানে (ক) শিশুর বয়স ও লিঙ্গ; (খ) শিশুর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা; (গ) শিশুর শিক্ষাগত যোগ্যতা বা শিশু কোন্ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত; (ঘ) শিশুর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক অবস্থা; (ঙ) শিশুর পরিবারের আর্থিক অবস্থা; (চ) শিশুর ও তাহার জীবন-যাপনের পদ্ধতি; (ছ) অপরাধ সংঘটনের কারণ, দলবদ্ধতার তথ্য, সার্বিক পরিস্থিতি ও পটভূমি; (জ) শিশুর অভিমত; (ঝ) সামাজিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন;এবং (ঞ) শিশুর সংশোধন ও সর্বোত্তম স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আনুষাঙ্গিক যে সকল বিষয় বিবেচনার্থে গ্রহন করা আবশ্যক ও প্রয়োজন। তাই আইনের বিভিন্ন শর্তানুযায়ী হলেও দেশের সকল শিশুদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অতিশীঘ্রই সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে আশাবাদী শিশু অভিভাবক ও সচেতন মহল।